ট্যাক্স বিষয়ে নভেম্বরের পরের কিছু সম্ভাব্য পোষ্ট
রিটার্ণ তৈরি এবং জমা দেবার জন্য জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময় থাকে, যে কারো রিটার্ণ জমা দেবার জন্য ৫ মাস পর্যাপ্ত সময়-যদি তিনি প্রথম থেকেই প্রস্তুতি গ্রহন করেন।
আসুন দেখে নেই নভেম্বরের পরের সম্ভাব্য কিছু পোষ্ট
পোষ্ট নং ০১: নভেম্বরের পরে অনেকেই হা হুতাশ শুরু করবেন যে, গত নভেম্বরে রিটার্ন দেওয়া হয়নি, এখন ফেব্রুয়ারী/মার্চ/এপ্রিল/মে মাস, এখন কি করব? আমাকে কি রিটার্ন জমা দিতে হবে? রিটার্ণ জমা না দিলে কি কোন অসুবিধা হবে?
পোষ্ট নং ০২: শখ করে/ভুলে/ব্যস্ততায় রিটার্ন দেওয়া হয়নি।ট্যাক্স অফিস নোটিশ করেছে রিটার্ন জমা না দেওয়ায় ট্যাক্স/জরিমানা করেছে। আমার তো জিরো রিটার্ন, তাহলে ট্যাক্স/জরিমানা কেন দিতে হবে? ট্যাক্স ল’ইয়ার ৭ হাজার টাকা চাইছে, ল’ইয়ার কি টাকা খাওয়ার ফন্দি করছে?
পোষ্ট নং ০৩: গতবছর নভেম্বরের ট্যাক্স এসেছিল ৩৫০০ টাকা, শখ করে/ভুলে/ব্যস্ততায় নভেম্বরে রিটার্ণ জমা দেইনি, এখন ইনকাম ট্যাক্স ল’ইয়ার আমার কাছে ২৫ হাজার চাইছে, ল’ইয়ার কি টাকা খাওয়ার ফন্দি করছে?
পোষ্ট নং ০৪: বিদেশে থেকে রেমিট্যান্স এর টাকা পাঠাই, কিন্তু দুই পয়সার ল’ইয়ার বলছেন- আমি নাকি করমুক্ত সুবিধা পাব না। রেমিটেন্সের আয়ের কেন ট্যাক্স দিতে হবে?
পোষ্ট নং ০৫: আমি বাংলাদেশের সনামধন্য ফ্রিল্যান্সার – অথচ দুই পয়সার ট্যাক্স প্র্যাকটিশনার বলছে-আমি নাকি ট্যাক্স ফ্রি সুবিধা পাবেন না। ফ্রিল্যান্সদের কেন ট্যাক্স দিতে হবে?
পোষ্ট নং ০৬: ফেসবুকে পরিচিত এক ভাই রিটার্ণ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু আয়কর অফিস থেকে নোটিশ এসেছে। যিনি রিটার্ণ তৈরি করে দিয়েছেন তিনি ফোন ধরছেন না, এখন আমি কি করব? অফিসে কি কি ডকুমেন্টস নিয়ে যেতে হবে? আয়কর অফিসে থেকে বলছে আমার রিটার্নে জরিমানা হতে পারে। এখন আমি কি করব?আমাকে কি জরিমানা দিতে হবে?কেন দিতে হবে ?
সতর্ক করার জন্য পোষ্ট দিলেও অনেকে নেগেটিভ কমেন্টস করেন, যেন আমরা ল’ইয়ার/ট্যাক্স এক্সপার্ট/আইটিপি, “ডর ক্যা বিজনেস” শুরু করে কিছু পয়সা কামিয়ে নেওয়ার ধান্দা করছি।
মানুষদের সচেতন করার জন্য পোষ্ট দেওয়া আর ফাঁদে ফেলা এক নয়-এটা বর্তমান জেনারেশনের অনেকেই বোঝেন না, বুঝতে আগ্রহী নন।
বি:দ্র: মেধা,শ্রম এবং সময় ব্যয় করে প্রতিটি রিটার্ন ফাইল তৈরি করতে হয়, তাই রিটার্ণ তৈরি করাতে সম্মানী প্রদান করতে হবে। স্বশরীরে সাক্ষাতে রিটার্ন বুঝে নিন, নিরাপদ থাকুন।
টিন আছে কিন্তু রিটার্ণ জমা দেন না, সাধু সাবধান। “বেরসিক আয়কর অফিস” নোটিশ জারী করলে অডিট ফেস করতেই হবে, আইনগতভাবে না হলে বড় অংকের জরিমানা দিতে হবে।
ঘটনা ১: রিটার্ন জমা দেননি, কারন অনেকেই বুদ্ধি দিয়েছেন আরে, জিরো রিটার্ন জমা না দিলেও কোন সমস্যা হয় না। আপনিও তাদের বুদ্ধি পেয়ে বুদ্ধিমান হলেন। কিন্তু আয়কর অফিসের “বেরসিক অফিসার” রিটার্ন জমা না দেওয়ার কারনে নোটিশ জারী করল। আপনার পরম হিতৈষী বুদ্ধিদাতাগন এখন নীরব।
ফলাফল-ল'ইয়ারের মাধ্যমে অডিট ফেস করতে হল,খরচও হল, জরিমানাও হল, ঝামেলাও হল।
ঘটনা ২: জানুয়ারী পর্যন্ত সময় আছে ভেবে শখ করে/ভুলে/ব্যস্ততায়/ দিচ্ছি দেবে করে রিটার্ণ আর জমা দেওয়া হয়নি। “বেরসিক আয়কর অফিস” রিটার্ণ না পেয়ে নোটিশ জারী করেছেন।
ফলাফল ল'ইয়ারের মাধ্যমে অডিট ফেস করতে হল, ল'ইয়ারের সম্মানী, আয়কর অফিসে চা নাস্তা, মিষ্টি খুশী করা সবই হল, ৫ গুন বেশি আয়কর জরিমানা দিয়ে তবেই মুক্তি পেলেন।
ঘটনা ৩: সঞ্চয়পত্র/ডিপিএস/এফডিআর মেয়াদ পূর্তীতে ক্লোজ করলেন। কিন্তু রিটার্নে সঞ্চয়পত্র/ডিপিএস/এফডিআর উল্লেখ না থাকায় “বেরসিক আয়কর অফিস” নোটিশ করেছে।
ফলাফল ল'ইয়ার সম্মানী, জরিমানা সবই দিয়ে মুক্তি মিলল।
ঘটনা ৪: রহিম সাহেব গাড়ি কেনার সময় কোন কাগজপত্র দেননি, দোকানের কর্মকর্তাই নিজ দায়িত্বে সব কাজগপত্র রেড়ি করে উনাকে দিয়েছেন। গাড়ীর রেজিস্ট্রেশন নবায়ন/ফিটনেস সার্টিফিকেট/লাইসেন্স রিনিউ করার সময় ধরা পড়ে টিন নাম্বারটি সঠিক নয়, অর্থাৎ ভুয়া। উপরুন্ত এতদিন কোন রিটার্ন জমা না দেওয়ায় আয়কর অফিস থেকে চিঠি এসেছে।
ফলাফল ৪ বছরের জরিমানা সহ রিটার্ণ জমা দিতে বাধ্য হয়েছেন এবং আয়কর অফিসের অডিট বোনাস হিসেবে পেয়েছেন।
ঘটনা ৫: মিস্টার স্মার্ট, সঞ্চয়পত্র করেছেন। কিন্তু যার মাধ্যমে রিটার্ন জমা দিয়েছেন, তিনি আয়কর অভিজ্ঞ না হওয়ার রিটার্নে অনেক ভুল করেছেন, সঞ্চয়পত্র রিটার্ন এ দেখাতে ভুলে গেছেন। “বেরসিক আয়কর অফিস” থেকে নোটিশ জারী হয়েছে, যাকে দিয়ে রিটার্ণ পূরন করেছেন, আইনের ধারা এবং আয়কর নীতিমালা সম্পর্কে ধারণা না থাকায়, কোন হেল্প করতে পারেননি, বরং অভিজ্ঞ কোন ল'ইয়ারের কাছে যেতে পরামর্শ দেন।
ল'ইয়ারের ফি এবং আয়কর অফিসের চা, নাস্তা, মিষ্টি, খুশী করা বাবদ প্রচুর খরচ হয়ে গেল।
ঘটনা ৭: করদাতা ৭০ লক্ষ টাকা ফ্ল্যাট কিনেছেন কিন্তু রিটার্ণ এ শো করলেন না। আয়কর অফিস ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে আয় ব্যায়ের গড়মিল থাকায় ফাইল অডিটে পড়ল।
ক্রেডিট কার্ড সার্ভার, সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স সার্ভার থেকেও আয়কর অফিস যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাওয়ায় আয়কর ফাকি দেবার সুযোগ নেই।
ঘটনা ৬: করদাতার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা হয়েছে, এখন আর পূর্বের বছরগুলির কর দিয়েও রিটার্নে সম্পদ দেখাতে পারবেন না, রিটার্ন সার্টিফিকেট কোন কাজেই আসবে না।
পূর্বে শুধু টিন নাম্বার দিয়েই সব সেবাসমূহ পাওয়া যেত, কিন্তু বর্তমানে রিটার্ন স্লিপ/ট্যাক্স সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, রিটার্ন স্লিপ ছাড়া সব সেবা পাওয়া সম্ভব নয়।
শুরু থেকে ফাইলে ঝামেলা করে রাখলে পরে সেটা পরিবর্তন করা অনেক কঠিন। তাই এখন থেকেই আপনাদের আয়কর ফাইল নির্ভুল/ক্লিয়ার রাখুন। রিটার্ন নিজেই সঠিকভাবে ফিলআপ করতে পারলে উত্তম, আর নিজে না পারলে ট্যাক্স এক্সপার্টের সাহায্য নিন। অদক্ষ কারো মাধ্যমে রিটার্ন জমা দেওয়ালে ক্ষতিটা আপনারই হবে।
রিটার্ণ নিয়ে উদাসীন থাকবেন না। কারন দিনশেষে দায়টা আপনারই।
বি:দ্র: মেধা,শ্রম এবং সময় ব্যয় করে প্রতিটি রিটার্ন ফাইল তৈরি করতে হয়, তাই রিটার্ণ
Comments
Post a Comment